বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই ২০২৫ - ০৮:৫০
কারবালার শিক্ষা ও ইমাম যামানের (আ.ফা.) যুহুরের প্রস্তুতি

কারবালার ঘটনা শুধুমাত্র একটি শোকাবহ ঐতিহাসিক অধ্যায় নয়, বরং এটি মানব জাতির চিরন্তন নৈতিক পরীক্ষার এক জ্বলন্ত ময়দান। এই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে—সত্য ও মিথ্যার সংঘর্ষ কেবল অস্ত্র দিয়ে নয়, বরং আত্মা, ইচ্ছাশক্তি ও বিশ্বাসের মাধ্যমেও সংঘটিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: কারবালা একটি দর্পণ, যাতে প্রতিটি যুগের মানুষ নিজেকে দেখতে পারে। সময় পরিবর্তিত হলেও মানুষের অন্তরের দুর্বলতাগুলো প্রায় অপরিবর্তিত থাকে।

যদি আমরা ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর যুহুরের জন্য সত্যিকারের প্রস্তুতি নিতে চাই, তবে কারবালার শিক্ষাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং সে সময় যারা সত্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের নেতিবাচক গুণাবলী থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া লোকদের মধ্যে চারটি প্রধান নেতিবাচক গুণ ছিল, যেগুলো থেকে অন্যান্য সকল নৈতিক দুর্বলতা উৎপন্ন হয়েছিল।

এই চারটি নেতিবাচক গুণ আমাদের মাঝেও যেন গড়ে না ওঠে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। নেতিবাচক সে ৪টি গুণ নিম্নরূপ:

১. ভয়
অনেকে সত্য বুঝেছিল, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর অবস্থান সম্পর্কে সচেতন ছিল। তবু এজিদের তরবারির ঝলক, হত্যা-ভয় ও নিপীড়নের আশঙ্কায় তারা সাহস হারিয়ে ফেলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত অন্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল।

যুহুরের প্রস্তুতিতে আমাদের ভীত নয়, বরং সাহসী ও আস্থাশীল হতে হবে।
ভয় যেন আমাদের কখনো সত্যের বিরুদ্ধপক্ষ না বানায়।

২. দৃষ্টিহীনতা
কিছু মানুষ সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ ছিল। তারা ইমাম হুসাইন (আ.)-কে চিনত না, শত্রুদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারত না।

এই অভ্যন্তরীণ অজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টি-হীনতা তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তারা সত্যের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিল।

ইমামে যামানের (আ.ফ.) সঙ্গী হতে চাইলে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি ও সত্যবিচার শক্তি বাড়াতে হবে, যাতে আমরা মিথ্যার মোহজাল ছিন্ন করে প্রকৃত সত্যকে চিনতে পারি।

৩. লোভ
এদের অনেকেই সত্য জানতো, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হকপন্থা ও সঠিকতা উপলব্ধি করত, এমনকি ভয়েও ছিল না। কিন্তু দুনিয়ার মোহ, সম্পদ, পদমর্যাদা ও ক্ষমতার লোভ তাদের অন্তরকে আচ্ছন্ন করেছিল। তারা দুনিয়ার স্বার্থে আখিরাতকে বিসর্জন দিয়েছিল।

যুহুরের প্রস্তুতির পথে আমাদের এই দুনিয়া-লোভ দূর করতে হবে এবং আত্মাকে পরকালমুখী করে তুলতে হবে।

৪. হিংসা
এদের না ছিল ভয়, না দৃষ্টিহীনতা, না-ই দুনিয়ালোভ। তবে তাদের অন্তরে ছিল আহলে বাইতের (আ.) প্রতি ঘৃণা ও হিংসা। তারা চায়নি আলী (আ.)-এর বংশধরেরা শাসন করুক। এই বিদ্বেষই তাদের অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।

ইমাম মাহদির (আ.ফা.) সৈনিক হতে হলে আমাদের হৃদয়কে ঘৃণা, হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত করতে হবে। না হলে অজান্তেই আমরা সত্যের বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়তে পারি।

পরিশেষ, এই চারটি মূল নেতিবাচক গুণ—ভয়, দৃষ্টিহীনতা, লোভ ও হিংসা—যদি আমরা আমাদের হৃদয় থেকে দূর করতে পারি, তবে অনেক অন্যান্য দুর্বলতা থেকেও মুক্তি লাভ সম্ভব হবে।

এই আত্মিক প্রস্তুতির মাধ্যমেই আমরা ইমাম যামানের (আ.ফা.) যুহুরের জন্য প্রস্তুত হতে পারব এবং তাঁর নেতৃত্বে সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে পারব।

কারবালা আমাদের শিক্ষা দেয়: “সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে হলে চাই— সাহস, অন্তর্দৃষ্টি, দুনিয়াবিমুখতা ও হৃদয়ের বিশুদ্ধতা।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha